বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের প্রযোজক আব্দুল বারী খুনে কেউ জড়িত নন। তিনি ২০ টাকা দিয়ে ফল কাটার ছুরি কিনে নিজেই গলা কেটে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।
ডিবির ধারণা, প্রচণ্ড মানসিক অবসাদ ও বিভিন্ন শারীরিক দুর্বলতার কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
এ নিয়ে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, হত্যা মামলা হওয়ার পর থেকেই গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করে। আব্দুল বারী নিভৃত একজন মানুষ ছিলেন। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে তার সরাসরি কিংবা ডিজিটাল কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি খুব অল্প কথা বলতেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে খুব অল্প মানুষের সঙ্গে মিশতেন।
‘তার কোনো বন্ধু বা শত্রু ছিল না। তিনি কোনো প্রেম বা পরকীয়া সম্পর্কেও লিপ্ত ছিলেন না। তার ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইস পর্যালোচনা করে তেমন কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। তিনি কোনো নেশায়ও আসক্ত ছিলেন না। তবে মাঝে মাঝে চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ এবং হারবাল ওষুধ খেতেন।’
‘ঘটনার দিন পুরোটা সময় বাসায়ই ছিলেন তিনি। এরপর রাত ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন অলিগলিতে একা একা হেঁটেছেন। তার হাঁটাচলা ছিল উদ্দেশ্যহীন। কোনো কারণ ছাড়াই একই রাস্তায় তিনি বারবার হেঁটেছেন। এরপর একাধিক দোকানে তিনি ফল কাটার ছুরি কিনতে যান। সর্বশেষ তিনি এক দোকান থেকে একটি ছুরি কেনেন ২০ টাকা দিয়ে।’
‘যেই দোকান থেকে আব্দুল বারী ছুরি কিনেছিলেন, সেই দোকানে একই ছুরি পাওয়া যায়। ছুরি কিনে দোকানের রাস্তা অতিক্রম করে গাউসুল আজম মসজিদে বেশ কিছু সময় অবস্থান করেন। সেখান থেকে প্রায় ৪০-৫০ মিনিট হেঁটে গুলশান-বনানী পার হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছান। এরপর তিনি ছুরি দিয়ে নিজেই গলা কাটেন।’
গোয়েন্দা বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মানসিক অবসাদ থেকে নিজের গলা কেটে নিজেই আত্মহত্যা করেছেন আব্দুল বারী। তার মরদেহ উদ্ধারের সময় তার কাছ থেকে একটি ভিভো মোবাইল ও মানিব্যাগে থাকা প্রায় ৯০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। কেউ ছিনতাই করতে গেলে মোবাইল ও টাকা-পয়সা ফেলে রেখে যাওয়ার কথা নয়।
‘এ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে একাধিক ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাজধানীর যেসব ভাসমান অপরাধী অর্থের বিনিময়ে অপরাধ সংগঠিত করে, তাদেরও অনুসরণ করা হয়।’
গত ৭ জুন রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে মহাখালীর ভাড়া বাসা থেকে বের হন আব্দুল বারী। এরপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি। পরদিন (৮ জুন) সকালে রাজধানীর নিকেতনের লেকপাড় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, সকালে ছিন্নমূল কয়েকজন শিশু নিকেতনের পার্শ্ববর্তী লেকপাড়ে একজনের মরদেহ দেখে পুলিশকে জানায়। বুধবার (৮ জুন) সকালে আবদুল বারীর মরদেহ উদ্ধার করে গুলশান থানা পুলিশ।
পরে এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই মো. আব্দুল আলীম। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগকে। মরদেহ উদ্ধারের এক মাস আটদিনের মাথায় এ তথ্য জানাল গোয়েন্দা পুলিশ।