ভাতা বিতরণে ‘নগদ’র সাফল্যকথা
পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত এক গ্রাম। এই গ্রামটির ত্রিসীমানায় কোনো ব্যাংক নেই। যেই গ্রামে গাড়ির চাকাই সেভাবে পৌঁছায়নি, সেই গ্রামে ব্যাংকের আশা করা তো কঠিন। এই গ্রামের অসহায়, হাঁটতে না পারা বৃদ্ধ বা সংগতিহীন প্রতিবন্ধী মানুষকে আগে একসময় ছুটতে হতো ব্যাংকে। কাদা-পানি পাড় করে, গাটের খরচ করে গাড়িতে চরে দূরের ব্যাংকে গিয়ে সারাটা দিন বসে থাকতে হতো সরকারের ভাতা পাওয়ার জন্য।
বদলে গেছে সেই দিন। সরকার এখন সরাসরি তার ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা। আর এই ভাতা পৌঁছে দেওয়ার দুঃসাধ্য কাজটাই সহজ করে ফেলেছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’।
বাংলাদেশের প্রান্তিক এলাকার মানুষের হাতে ভাতা পৌঁছে দেওয়ায় ‘নগদ’-এর কৃতিত্বের কথা স্মরণ করছিলেন বাংলাদেশ সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিদায়ী মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম। সমাজসেবা অধিদপ্তর বিতরণ করে থাকে বিধবা-স্বামীনিগৃহীতাভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী শিশু ভাতা এবং শিক্ষা উপবৃত্তি। এই ভাতাগুলো যারা পেয়ে থাকেন, তারা স্বভাবতই সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষ।
বাংলাদেশে ভাতা বিতরণের ডিজিটালাইজেশন হয়েছে এই রফিকুল ইসলামের হাত ধরে। আগে মানুষের ভাতা নেওয়ার কষ্টের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এই দিনটাই বদলে গেছে। আগে মানুষ ব্যাংকে গিয়ে বসে থাকতো। একটি নির্ধারিত দিনে যেতে হতো। যাতায়াতের একটা খরচ ও সময় ব্যয় হতো। এখন কোথাও যাওয়া লাগছে না, কোনো খরচ হচ্ছে না। মানুষের জন্য ব্যাপারটা দারুণ উপকারী হয়েছে।
‘নগদ’ যে খুব সহজে কাজটা করতে পেরেছে, তা নয়। সেজন্য এ প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের লড়াই করতে হয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে। সেই লড়াইয়ের গল্পটা মনে করিয়ে দিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জ ছিলো। বিশেষ করে পৌঁছানোর কষ্ট। এমন সব এলাকায় ভাতা দেওয়াটা ছিলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের। পটুয়াখালীর রাঙাবালির কথা আমি বলবো। আমাদের ভাতা বিতরণের একটা অংশ ছিলো গ্রীষ্মকালে। তখন সমুদ্র ছিলো উত্তাল, ভয়ঙ্কর ঢেউ। রাঙাবালি বা কুতুবদিয়ায় ওই সময়ে ‘নগদ’-এর কর্মীরা সেই উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে গেছেন। ‘নগদ’ রাঙাবালিতে যে কাজ করেছে, তা খুবই প্রশংসনীয়। তারা ওই মে মাসে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সেখানে গিয়ে লোকজনকে অ্যাকাউন্ট করিয়েছেন, ভাতা পৌঁছানোর কাজ সম্পন্ন করেছেন।’
শুধু এই প্রাকৃতিক বাঁধা অতিক্রমের জন্য নয়, যত দ্রুত নগদ এই কাজের জন্য নিজেকে যোগ্য করেছে, তাতেও মুগ্ধ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই প্রজেক্টের সিংহভাগ নগদ-এর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। নগদ-এর ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত ডায়নামিক, দূরদর্শী এবং যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যে তারা তাদের লোকবল বাড়িয়েছেন, লোকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। শুধু তাই নয় স্বল্প সময়ের মধ্যে তারা ৬০ লক্ষ্য অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেছেন। এটা তাদের করা অসাধারণ কাজ ছিল।
এমনকি তিনি নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি যে, নগদ এতো দ্রুত এই মহা কর্মযজ্ঞ আয়োজন করতে পারবে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নিজেরও বিশ্বাস ছিলো না যে, তারা এতো অল্প সময়ের মধ্যে ৬০ লাখ মানুষের অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারবে। এবারের ভাতা বিতরণে আমরা নগদ সম্পর্কে কোনো অভিযোগ পাইনি। কোথাও কেউ বলেনি বা কোথাও ছাপা হয়নি। আমাদের রিপোর্টও বলছে, তারা খুব স্বচ্ছভাবে ভাতা বিতরণ করছে। নগদের দারুণ ম্যানেজমেন্টের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।’
রফিকুল ইসলাম মনে করেন, দায়িত্ব দিলে নগদ সরকারের সব ভাতাই শতভাগ বিতরণ করতে পারবে। সে ক্ষমতা তাদের আছে।’