বর্তমান বাজেটে বেকারদের স্থায়ী কর্মসংস্থান ও বেকার ভাতা চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ বেকারত্ব মুক্ত মঞ্চ। রোববার (২৪ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। এসময় সামাজিক নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবি ও তার বাস্তবায়ন চেয়েছে সংগঠনটি।
এসময় বক্তব্য দেন অধ্যাপক হুমায়ূন কবির হিরু, মো. বাহারাইনে সুলতান বাহার, রফিকুল ইসলাম সম্রাট, ইসমাঈল হোসেন, ওমর ফারুক, আছমা আক্তার শীলা, আনোয়ার সার্কিন, মুর্শিদুল হক বিদ্যুৎ, মো. সলিমুল্লাহ হিরা, তুষার রহমান প্রমুখ।
মানববন্ধনে বেকারত্ব মুক্ত মঞ্চের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা আল ইহযায বলেন, জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর ২০ লাখের অধিক নারী-পুরুষ নতুন করে শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছেন। কিন্তু আমাদের দেশে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ার ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ নতুন বেকার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে কর্মসৃজন খাতে ১৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ অর্থ বিভিন্ন প্রকল্পে খরচ না করে বেকার যুবকদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন বর্তমান বাজেটে কর্মসংস্থানের ওপর জোর দেবেন। কিন্তু তা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে এখন তা দেখার বিষয়। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা আইন শীর্ষক নতুন একটি আইন করে বেকার ভাতা দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু তা এখনো দৃশ্যমান নয়। করোনার কারণে গত তিন বছর নতুন করে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। বরং অনেকে নতুন করে বেকার হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বেকারত্বের সমস্যা সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বেকারদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধন থেকে বলা হয়, বাজেটে ৪০ হাজার কোটি টাকা ওয়াকিং ক্যাপিটাল ঋণ দেওয়ার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কর্মসংস্থান খাতে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ অর্থ সম্পূর্ণ বেকার যুবকদের অনলাইন ভিত্তিক তালিকা করে মাথাপিছু ১০ লাখ টাকা হারে ঋণ দেওয়ার অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশ বেকারত্ব মুক্ত মঞ্চের ১১ দফা দাবি-
# দেশে মোট বেকারত্বের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিতের জন্য অনলাইন ভিত্তিক তালিকা করতে হবে। রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধায়নে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
# বেকারদের কর্মস্থান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে মাসিক ১০ হাজার টাকা হারে বেকার ভাতা দিতে হবে।
# বেকারত্ব নিরসনের লক্ষ্যে ‘বেকারত্ব নিরসন’ নামে মন্ত্রণালয় অথবা অধিদপ্তর গঠন করতে হবে।
# শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত, বিদেশ ফেরত, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনা জামানতে, সহজ কিস্তিতে ও বিনা সুদে সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা ঋণ দিতে হবে।
# বিদেশে যেতে ইচ্ছুক যুবকদের সরকারি খরচে অথবা নামমাত্র মূল্যে (যা বিমান ভাড়া খরচ), সরকারি তত্ত্বাবধায়নে বিদেশ পাঠাতে ও চাকরি করতে ইচ্ছুক বেকার যুবকদের সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে আবেদন ফি ছাড়া দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
# চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করতে হবে এবং অভিজ্ঞতা চাওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে।
# বেকারদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ বা চাকরি দেওয়ার নামে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতারণা কারলে সে প্রতিষ্ঠানের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
# বাতিল হয়ে যাওয়া সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে বেকার কর্মীদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
# রাষ্ট্রের মোট বাজেটের এক দশমাংশ অর্থ বেকারদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বরাদ্ধ করতে হবে।
# দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা বাড়াতে কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করাতে হবে এবং প্রশিক্ষণের যোগ্যতা বিবেচনাপূর্বক কর্মসংস্থান দিতে হবে।