দেশের অন্যতম ব্যস্ত বাস টার্মিনালগুলোর একটি রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর এই টার্মিনালের সেই চিরচেনা রূপ যেন ম্লান হয়েছে। ভিড় নেই যাত্রীদের, ব্যস্ততা নেই কাউন্টারগুলোতে। আবার যাত্রী সংকটে বন্ধ অধিকাংশ কাউন্টার। প্রয়োজনের তাগিদে যেসব যাত্রী এসেছেন তাদেরও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। আবার কাউন্টারে দায়িত্বপ্রাপ্তরাও যাত্রীদের কাছে এত বেশি ভাড়া চাইতে বিব্রত বোধ করছেন। অনেকটা নিরুপায় হয়েই বাড়তি ভাড়া নিতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
সোমবার (৮ আগস্ট) গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন আমিনুর রহমান। মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এসেছেন। তিনি জানান, অন্যান্য সময় মহেশপুর থেকে ৫০০ টাকায় এলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা। ফলে যাতায়াতের জন্য তাকে ৪০০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে।
আমিনুর বলেন, ঢাকায় এসেছি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে। মালয়েশিয়া যাবো বলে বিপদে পড়ে ঢাকায় এসেছি। অন্যান্য সময় ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বাড়ি গিয়েছি। কিন্তু এখন ৭০০ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন জাহিদুল হক। কক্সবাজার যাবেন এই নবদম্পতি। অন্যান্য সময় এই রুটে এসি বাসের ভাড়া ১ হাজার ৮০০ টাকা হলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার টাকা। ফলে তাদের দুজনকে ঢাকা-কক্সবাজার যাতায়াত করতে বাড়তি ৮০০ টাকা গুনতে হবে।
জাহিদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, নতুন বউকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যাবো। বাসে যে ভাড়া চায় তা দিয়ে আমার মনে হয় বিমানে যাওয়া যাবে। দেশে সবকিছুর দাম বাড়ছে, শুধু মানুষের দাম কমছে। একটি কোম্পানিতে তিন বছর ধরে চাকরি করি, বেতন কানাকড়িও বাড়েনি অথচ সবকিছুই বেড়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-দর্শনা রুটে এসি বাসের ভাড়া ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এই রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৯০ টাকা। এই রুটে গড়ে নন-এসি বাসে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে এসি বাসে ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পযর্ন্ত বেড়েছে।
এদিকে বাড়তি ভাড়া নিয়েও তেল খরচ পোষাবে না বলে জানানো হয় বাস কাউন্টারগুলো থেকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা রুটে একটি এসি বাসে ডিজেল প্রয়োজন হয় ১৮০ লিটার। আগে ১৪ হাজার ৪০০ টাকার ডিজেল লাগতো। এখন ডিজেল খরচ বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৫২০ টাকা। ফলে এই রুটে অতিরিক্ত ৬ হাজার ১২০ টাকা খরচ বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় ভাড়া বাড়েনি। আগে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরিভাড়া ছিল ৪ হাজার ৭০০ টাকা, এখন সেটা ৫ হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা-কুষ্টিয়া-ঠাকুরগাঁওগামী শুভ বসুন্ধরা পরিবহনের কর্মকর্তা উজ্জ্বল বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, তেল খরচ তুলতেই হিমিশিম খাচ্ছি। যাত্রীদের কাছে আর কত বেশি ভাড়া চাওয়া যায়? যাত্রীদের পকেটে টাকা থাকতে হবে না? যাত্রীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন, আমরাও নিরুপায়। এখন ঢাকা-সাতক্ষীরা রুটে একটি বাসের জন্য বাড়তি ৬ হাজার ১২০ টাকার ডিজেল লাগছে। এটা কীভাবে ওঠাবো?
এ অবস্থায় গাবতলীতে এসে অনেক যাত্রী অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। কাছে টাকা নেই বলে তাদের দাবি। আবার যাত্রীদের কাছে বাড়তি ভাড়া চাইতে বিব্রত বোধ করছেন বলেও জানান অনেক কাউন্টারের ম্যানেজার।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের ম্যানেজার আমিনুর রহমান বলেন, যাত্রীদের কাছে ভাড়া চাইতেই লজ্জা লাগে। কী করবো ভাই, নিরুপায় হয়ে গেছি। ৮০ টাকার ডিজেল ১১৪ টাকা। আমাদের বাঁচার পথ নেই। নিজেরও চক্ষুলজ্জা লাগে। কীভাবে যাত্রীদের কাছে এত বেশি ভাড়া চাওয়া যায়?
শুক্রবার (৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িছে সরকার। মূল্যবৃদ্ধির পর বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা এবং নগরে ৩৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। দূরপাল্লায় আগের ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছে। বেড়েছে ২২ শতাংশ। বাস-ট্রাকের জ্বালানি ডিজেলের দাম ৪২.৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা। যার প্রভাব পড়েছে যাত্রীদের ওপর।