‘অটো শিম’ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষকরা। ২৫ দিনের মধ্যে আগাম চাষ হওয়া এ শিম বাজারে মিলবে বলে জানিয়েছেন তারা। ‘অটো শিম’ চাষে এখানকার কৃষকরা প্রতিবারই লাভবান হন। এবারও একই স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে ১১৩০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। এরমধ্যে শুধুমাত্র মুলাডুলি ইউনিয়নে ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়। ২০২১ সালে এ উপজেলায় ৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শিম বিক্রি হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দেশের অন্যতম শিম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে এখন চলছে আগাম শিম চাষ। জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝিতে আগাম শিম চাষের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে চাষিরা। বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির পানি থেকে শিম গাছকে রক্ষা করতে জমিতে ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে বিট বা টিবি। সে উঁচু বিটে চাষ হচ্ছে শিমের।
‘অটো’ জাতের শিম গাছ এরই মধ্যে মাচায় উঠে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই পুরোদমে এসব শিম বাজারে উঠবে। এ শিম চাষে প্রতিবছরই সফলতা পান এখানকার চাষিরা। তাই প্রতিবছরই আবাদ বাড়ছে। শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজারও। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক শিম ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে যায়।
মুলাডুলির বাঘহাচলা গ্রামের শিম চাষি কামাল হোসেন বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে শিমের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা আবাদে খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আবাদ ভালো হলে বিঘা প্রতি শিম বিক্রি হবে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতবছরই আগাম জাতের অটো শিম বাজারে প্রথম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। ফলন ভালো হলে আর কৃষক ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হবেন।’
বেতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী বলেন, ‘আগাম জাতের শিম চাষে ব্যাপক লাভবান হয়েছে এখানকার কৃষকরা। শিম চাষে উৎসাহ বাড়ছে।’
মুলাডুলি দৈনিক সবজি বাজার সমিতির উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বাবু জাগো নিউজকে বলেন, আগাম জাতের শিম চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এখনো শিম বেচাকেনা শুরু হয়নি। আশা করছি ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই আগাম জাতের শিম বাজারে আসবে।
মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. আলিউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, অটো, ঘৃত কাঞ্চন ও রূপসী নামের আগাম জাতের শিম এখানে চাষাবাদ বেশি হয়। আগাম জাতের শিমে চাষিরা লাভবান হলেও এ ফলনে সার ও কীটনাশক মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করতে হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানীর বাজারে আগাম যে শিম পাওয়া যায় সেটি উৎপাদন হয় ঈশ্বরদীতে। দেশের সবচেয়ে বেশি শিম এখানে চাষাবাদ হয়। তবে আগাম শিম চাষে কৃষকরা অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে যা স্বাস্থ্যর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সার ও কীটনাশক কম ব্যবহার করে কীভাবে আগাম শিম উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।