পাবনার ঈশ্বরদীতে ঈদের পরের সপ্তাহে ঢ্যাঁড়শ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৩ টাকা কেজি দরে। ১৫ দিনের ব্যবধানে এ দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২২ টাকা।
উপজেলার মুলাডুলি আড়তের সবজি আড়তদার আমিনুল ইসলাম বাবু দেওয়ান জানান, ঈদের পরে আড়তে ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হয়েছে দু-তিন টাকা কেজি। কৃষকরা বাজারে পাঁচ মণ ঢ্যাঁড়শ নিয়ে এলে গাড়ি ভাড়ার জন্য তিন মণ বিক্রি করে বাকি দুই মণ গরুকে খাওয়ানোর জন্য বাড়িতে ফেরত নিয়ে গেছে। অনেকেই রাগে ক্ষোভে ঢ্যাঁড়শ জমি থেকে ওঠানো বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। জমিতেই নষ্ট হয়েছে ঢ্যাঁড়শ। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে এ চিত্র পাল্টে গেছে। ঢ্যাঁড়শ আড়তে এনে কৃষকরা এখন খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন।
মুলাডুলি ইউনিয়নের বাঘহাছলা গ্রামের ঢ্যাঁড়শ চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ ঢ্যাঁড়শের দাম কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। গাছ কেটে ও ক্ষেত থেকে ঢ্যাঁড়শ উঠিয়ে গরুকে খাওয়ানো শুরু করেছিলাম। এখন আবার দাম বেড়েছে। এতে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।’
ঢ্যাঁড়শ চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বছরের ৯ মাস ঢ্যাঁড়শের আবাদ হয়। মৌসুমের শুরুতেই ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে ঢ্যাঁড়শ বিক্রি করি। পরবর্তীতে ২০ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এবার হঠাৎ করেই ঢ্যাঁড়শ দু-তিন টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছিল না। বাজারে হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। এখন বাজার স্বাভাবিক হয়েছে। কৃষকরা ঢ্যাঁড়শ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।’
মুলাডুলি কাঁচামালের আড়ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন ঢ্যাঁড়শের পূর্ণ মৌসুম না। তবুও প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ ট্রাক ঢ্যাঁড়শ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। যখন মৌসুম থাকে তখন ৪০ থেকে ৪৫ ট্রাক পর্যন্ত ঢ্যাঁড়শ যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আড়তদাররা হিসাব করে দেখেছি প্রতি বছর এ আড়তে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার ঢ্যাঁড়শ বেচাকেনা হয়। এ ঢ্যাঁড়শ শুধুমাত্র ঈশ্বরদীর নয়। পার্শ্ববর্তী ছয় উপজেলা লালপুর, বাগাতিপাড়া, আটঘরিয়া, পাবনা সদর, গুরুদাসপুর, নাটোর সদরের ঢ্যাঁড়শ এ আড়তে বেচাকেনা হয়। এসব উপজেলার চাষিরা এখন সবচেয়ে বেশি ঢ্যাঁড়শের আবাদ করছেন।
মুলাডুলি কাঁচামাল আড়তের ইজারাদার রেজাউল করিম সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সারাদিনে এ আড়তে ৬ হাজার মণ (২৪০ টন) ঢ্যাঁড়শ বেচাকেনা হয়েছে। প্রতিদিন সাড়ে ৫ হাজার-৭ হাজার মণ বেচাকেনা হচ্ছে। ঢ্যাঁড়শের পূর্ণ মৌসুমে বেচাকেনা আরও কয়েকগুণ বেশি থাকে। ঈশ্বরদীসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ঢ্যাঁড়শের আবাদ হচ্ছে। এখানকার কৃষকরা এ ফসল আবাদে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা দু’পক্ষকে আড়তে ঢ্যাঁড়শের মূল্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে দেখা যায়।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ঢ্যাঁড়শের আবাদ হয়। এ ফসল চাষ করে এখানকার কৃষকরা খুবই লাভবান হচ্ছেন। তাই প্রতিবছরই ঢ্যাঁড়শের আবাদ বাড়ছে।