রাজশাহীতে সনদ বাণিজ্যে কোটিপতি হয়েছেন আবুল হাসনাত মো. কামরুজ্জামান মুকুল (৪৬) নামে সাবেক এক স্কুলশিক্ষক। অবৈধভাবে স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ২ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৯ টাকার সম্পদ গড়েছেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে এই মামলাটি হয়। রোববার (২৮ আগস্ট) মামলার বাদী ও দুদক রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আবুল হাসনাত মো. কামরুজ্জামান মুকুল চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছি জোতকার্তিক এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। এছাড়া চারঘাটের জোতকার্তিক বিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে রাজশাহী নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকায় বসবাস করেন।
মামলার বাদী আমির হোসাইন বলেন, কামরুজ্জামান মুকুলের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগরীতে সনদ বাণিজ্য করে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮৪ টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ আসে। পরে অনুসন্ধান শেষে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তিনি বলেন, গত বছরের ৪ জানুয়ারি দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ওই শিক্ষক উল্লেখ করেন, তার নামে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫০ টাকা মূল্যের অস্থাবর অর্থাৎ ৬২ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫০ টাকা মূল্যের সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ১২ হাজার ৪৪৭ টাকা মূল্যের স্থাবর ও ৪২ লাখ ৩৫ হাজার ৫০২ টাকা মূল্যের অস্থাবর অর্থাৎ মোট ২ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৯ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়।
দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, ১ কোটি ৫১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯৯ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেন ওই শিক্ষক। অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন তিনি, যা দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও ওই শিক্ষকের আয়কর নথি ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র অনুযায়ী তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য ২ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৯ টাকা। তার ঋণ পাওয়া যায় ১৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৯৯ টাকা। ঋণ বাদে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ২ কোটি ৭৫ হাজার ৫৫০ টাকায়।
তিনি আরও বলেন, ওই শিক্ষকের বৈধ আয় পাওয়া যায় ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭২ টাকা। পারিবারিক ব্যয় ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৮০৬ টাকা বাদে তার বৈধ সঞ্চয়ের পরিমাণ মাত্র ১৬ লাখ ২১ হাজার ৫৬৬ টাকা। কিন্তু তার ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮৪ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন জ্ঞাতআয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ, যা দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এদিকে, একই অপরাধে তার স্ত্রীর নামে পৃথক মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।