রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেছেন, যখনই এ দেশ-জাতি আক্রান্ত হয় তখনই ছাত্ররা এগিয়ে আসে। ছাত্ররা যতবার এগিয়ে আসবে তাদের পাশে শিক্ষকরা থাকবে। এটা আমাদের জোহা স্যার শিখিয়ে গেছেন। যারা পথ দেখায় তারা এগিয়ে থাকে। তাই যে কোনো নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের পথে নামতে হবে।
বুধবার (২৪ আগস্ট) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
উপাচার্য বলেন, আমরা ছাত্রদের শুধু শিক্ষা দেই না তাদের মধ্যে শুভবোধ চেতনা তৈরি করে দেই। তারা অন্যায়কে অবলীলায় অস্বীকার করতে পারে, রুখে দাঁড়াতে পারে। শিক্ষকরাই পারে তাদের মধ্যে একটি মনুষ্যত্ববোধ তৈরি করতে। সে মনুষ্যত্ববোধ থেকে ছাত্ররা সেদিন জেগে উঠেছিল। সিরিজ বোমা হামলা, হত্যা, লুণ্ঠন ইত্যাদির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল সেই মনুষ্যত্ববোধের তাড়না থেকে।
আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে ও রেজিস্টার অধ্যাপক আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান প্রামাণিক, অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র বিশ্বাসসহ আরও অনেকে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র-শিক্ষক সমাজ বাঙালি জাতির সব আন্দোলন-সংগ্রামে গৌরবময় ভূমিকার অধিকারী। বিশেষ করে প্রতিটি সেনা সমর্থিত স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের আগস্টে দেশে বিরাজমান নিপীড়নমূলক পরিস্থিতিতে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাঙ্গন প্রতিবাদী হয়ে উঠে। তৎকালীন রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি সেই প্রতিবাদ দমন করতে ছাত্র-শিক্ষকদের গ্রেফতার করে নির্যাতন-হয়রানির পথ বেছে নেয়।
রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, ২০০৭ সালে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার ছাত্রদের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে সেটি ইতিহাসে বিরল। দিনের পর দিন আমাদের পালিয়ে থাকতে হয়েছে। এমন কী আমাদের পরিবারে লোকজনের ওপর তারা নির্যাতন চালাতেও দ্বিধা করেনি। সেই সময় আমরা যারা তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা তো দূরের কথা বরং সেনা বাহিনীর পক্ষ নিয়ে আমাদের ওপর হামলে পড়েছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের সঙ্গে সেনা সদস্যদের সংঘর্ষ বাধে। এসময় অনেক ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ওই সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আট শিক্ষক ও এক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। দুদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশে সংঘর্ষে অন্তত কয়েকশ জন আহত হন।