30 C
Dhaka,BD
June 2, 2023
Uttorbongo
রাজশাহী

টুং টাং শব্দে মুখরিত রাজশাহীর কামারপাড়া, ছুরি-চাপাতির দাম চড়া

ঈদুল আজহার বাকি মাত্র দুদিন। শেষ সময়ে কোরবানির পশু কেনার পাশাপাশি দিনভর সমান তালে চলছে হাসুয়া, বটি, ছোড়া, চাপাতি ইত্যাদি ধারালো অস্ত্র ধার (শাণ) দেওয়ার কাজ। ফলে টুং টাং শব্দে মুখরিত রাজশাহীর কামারপাড়াগুলো। ব্যস্ততা বেড়েছে এ পেশার মানুষেরও। বছরের অন্য দিনগুলো অনেকটা অলস সময় পার করলেও ঈদুল আজহার আগে এসময়ে কামারদের দম ফেলার সময় থাকে না। এবারও বিরামহীন ব্যস্ততা আছে। তবে অন্যবারের তুলনায় ভিড় কম।

সরেজমিনে রাজশাহীর বিভিন্ন কামারপাড়ায় দেখা যায়, পশু জবাই সংশ্লিষ্ট অস্ত্র তৈরি করতে কামারদের মধ্যে কেউ লোহা আগুনে গরম করছেন, কেউ বা সেই লোহাকে পিটিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন আকার। আবার কেউ তৈরি হওয়া জিনিসে ধার দিচ্ছেন। তবে লোহা ও কয়লাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব জিনিসের দামও বেড়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের রনহাট কামারপল্লীর সুদেব কর্মকারের সঙ্গে।

প্রবীণ এই কামার বলেন, কোরবানির ঈদের জন্য দীর্ঘ ১১ মাস অপেক্ষায় থাকি। ঈদের আগে একমাস কাজের চাপে দম ফেলার অবকাশ থাকে না। আর মাত্র দুদিন বাকি। ফলে কাজ চলছে ভালোই, তবে আগের সেই চাপ নেই।

এদিকে দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্রেতাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাজশাহীর শিরোইল স্টেডিয়াম মার্কেটের ভাঙড়ি পট্টিতে ধারালো অস্ত্র তৈরি করতে আসা গোলাম রাব্বানী বলেন, সবকিছুর দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। তাই নতুন তৈরি না করে পুরানো অস্ত্রে ধার করিয়ে নিচ্ছি।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে রনহাট কামারপল্লীর বাসুদেব কর্মকার বলেন, লোহা ও কয়লাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের দাম বেড়েছে। ফলে হাসুয়া, বটি, ছোড়া, চাপাতিসহ সবকিছুই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।

জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ১০০ টাকার ছুরি এখন ১৫০ টাকা, আর বড়গুলো ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৪০০ টাকার চাপাতির দাম বেড়ে হয়েছে ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা। এতে অনেক ক্রেতা এসে ফিরে যাচ্ছেন। তারপরও বেচাকেনা মোটামুটি হচ্ছে।

একই সুরে কথা বলেন রনহাট কামারপল্লীতে চাপাতি কিনতে আসা ভ্যানচালক আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, সবকিছুরই দাম বেড়েছে। ছুরি-কাঁচিরও দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তাই দাম বাড়লেও জরুরি এ অস্ত্রটি মজবুত পেতে নতুন করেই তৈরি করে নিচ্ছি।

রাজশাহীর শিরোইল স্টেডিয়াম মার্কেটের ভাঙড়ি পট্টিতে ৩০ বছর ধরে কামার পেশায় জড়িত ভেলু কর্মকারের সঙ্গেও কথা হয়।

তিনি জানান, বছরের ১১ মাসে তাদের ব্যবসা হয় এক রকম; আর কোরবানির ঈদের আগের এক মাসে ব্যবসা হয় আরেক রকম। ঈদুল আজহা এলেই বেচাবিক্রি ও ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফলে কয়েকদিন ধরে বেশ কাজের চাপ বেড়েছে।

পাশেই কাজে মগ্ন লাল চাঁন কর্মকার নামে এ পট্টির অন্য আরেক কামার। তিনি বলেন, এখানে পুরোনো অস্ত্র ধার দেওয়া ছাড়াও অনেকেই নতুনভাবে তৈরি করে নিচ্ছেন। কেউ বা রেডিমেড কিনে নিচ্ছেন। তবে অস্ত্র ধার করানোর সংখ্যাই বেশি।

কয়েকজন কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত স্প্রিং ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে হাসুয়া, বটি, ছোড়া, চাপাতিসহ অন্যান্য ধারালো জিনিস তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি এসব ধারালো বস্তুর মান ভালো, দামও বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি জিনিসগুলোর দাম তুলনামূলক কম। লোহার মান ভেদে স্প্রিং লোহা ৬০০ টাকা, নরমাল ৩৫০ টাকা। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১৫০-২৫০, দা ২০০-৩৫০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরির দাম শুরু ৩৫০ থেকে, আর বঁটি ২৫০-৪৫০, চাপাতি ৫০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

Related posts

জঙ্গলে পড়েছিল গৃহবধূর মরদেহ

Asha Mony

মূল্যতালিকায় না থাকায় রাজশাহীতে ৪ দোকানির জরিমানা

Asha Mony

নাপা সিরাপে ১৫ টাকা বেশি, জরিমানা ১৫ হাজার

Asha Mony