গাইবান্ধায় সম্প্রতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় ‘কাটাবাড়ী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ নামের একটি -শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে আয়া পর্যন্ত ৫৫ জন লোকের নিয়োগ হবে। প্রতি পদের জন্য ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা ব্যাংক ড্রফটের কথা উল্লেখ্য আছে। অথচ শিক্ষক-শিক্ষার্থী তো দূরের কথা বিদ্যালয়ের জন্য নেই কোনো ভবনও। নির্মাণাধীন একটি বাড়ির সামনে শুধুমাত্র সাইনবোর্ড ফেলে রাখা আছে।
নামসর্বস্ব এ প্রতিষ্ঠানটির গত ২৩ জুলাই পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, অধ্যক্ষ পদের জন্য দুই হাজার টাকা, প্রভাষক (২৪ জন) হিসেবে দেড় হাজার, প্রদর্শক (৬ জন), ল্যাব সহকারী (৪ জন) ও সহকারী শিক্ষক (১৪ জন) হিসেবে এক হাজার করে এবং অফিস সহকারী (২ জন), নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরী ও আয়া (৪ জন) পদের জন্য ৫০০ টাকা করে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড গোবিন্দগঞ্জ শাখার একটি চলতি হিসাব নম্বরে জমা দিতে বলা হয়েছে।
বেতনকাঠামোর কথা উল্লেখ না থাকলেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদেরই আবেদন করতে বলা হয়েছে। প্রতি পদে পাঁচজন করে আবেদন করলেও প্রতিষ্ঠানটির হাতে চলে যাবে তিন লক্ষাধিক টাকা।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের কাটাবাড়ী গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের পাশেই পাকা বাড়ির সামনে মাটিতে রাখা আছে একটি সাইনবোর্ড। ক্যাম্পাস ও প্রতিষ্ঠাকাল হিসেবে ২০১৮ সাল লেখা রয়েছে সাইনবোর্ডটিতে।
স্থানীয়রা জানান, বাড়িটি ছামিউল আলম রাসুর। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। আবার প্রতিষ্ঠানের একজন সভাপতিও আছেন।
জানতে চাইলে ছামিউল আলম রাসু বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি চালু করার কথা ছিল। করোনার কারণে সবকিছু পিছিয়ে যায়। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের নামে তিন বিঘা জমি দানপত্র করা হয়েছে। ইআইআইএন নম্বর পাওয়ার জন্য ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে আবেদন করা হয়েছে। যে জমিতে অবকাঠামো হবে সেখানে এখন পানি। পানি শুকিয়ে গেলে জায়গাটি মাটি ভরাট করে ঘর তৈরি করা হবে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হবে।’
চাকরি প্রত্যাশী নুর আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখলাম সাইনবোর্ড ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আর কোনো অস্তিত্বই নেই। তাই এখন আর আবেদন করবো না। যেখানে কোনো অবকাঠামোই নেই সেখানে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।’
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ইমাম ইদ্রিস বলেন, ‘উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতির মার্কেটে আমাদের রুম নেওয়া আছে। আপাতত সেখানে পাঠদান শুরু করা হবে। প্রতিষ্ঠানের নামে এরই মধ্যে জমি দলিল হয়ে গেছে। পরবর্তীতে সেখানে যাবো। ঘরদরজা করা অনেক টাকা পয়সার ব্যাপার।’
প্রতিটি পদের বিপরীতে টাকার পরিমাণের নিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা ও বোর্ড গঠনে অনেক খরচ। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যদি টাকা বেশি হয় সেটা কলেজ ফান্ডে জমা থাকবে।’
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বেতন কাঠামো উল্লেখ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান এমপিও হলে সরকারি নিয়মঅনুযায়ী তারা বেতন পাবে। শিক্ষক নিয়োগ হলে তাদের সম্মানীর জন্য আমাদের দাতারা আছেন।’
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। ওই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন কাগজ আছে কি না তা দেখতে যাবো। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’