বিদ্যালয়ে দেরিতে আসার বিষয়ে জানতে চাওয়ায় এক অভিভাবককে জুতাপেটার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানোয় ১১ জন অভিভাবকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষক। এর জেরে তিনদিন ধরে বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা। ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাসরুমে কিংবা লাইব্রেরিতে বসে অলস সময় পার করছেন।
ঘটনাটি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এ নিয়ে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে সমাবেশের ডাকা হলেও কোনো অভিভাবক বিদ্যালয়ে আসেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮ জুলাই বিদ্যালয়ে দেরিতে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবি এক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে জুতাপেটা করেন। এর প্রতিবাদে ১৯ জুলাই দুপুরে মহাসড়কে মানববন্ধন করেন অভিভাবকরা। এ নিয়ে স্থানীয় ১১জন অভিভাবকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন প্রধান শিক্ষক। এর জেরে ২৪ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা আছেন কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী নেই। কেউ ক্লাস রুমে আবার কেউ লাইব্রেরিতে বসে সময় পার করছেন। অভিভাকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা থাকলেও কেউ আসেন নি।
অভিভাবকরা জানান, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ছবির বদলি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠাবে না।
অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অভিভাবককে জুতাপেটা করা, দায় সাড়া দায়িত্ব পালন, সময়ের ব্যাপারে উদাসীনতা, বিদ্যালয়ের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য উপকরণ সংকট, শিক্ষার্থীদের স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের বিস্কুট বাড়িতে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন।
অভিভাবক রেজাউনুল হক বাবু বলেন, ‘একজন অভিভাবককে জুতা দিয়ে পেটানো মানে সব অভিভাবককে নির্যাতন করা। এদিকে আমাদের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছেন প্রধান শিক্ষক। তাই আমরা লজ্জিত হয়ে ওই বিদ্যালয় কোনো বাচ্চা পাঠাচ্ছি না। তার বদলি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো বাচ্চা স্কুলে পাঠাবো না।’
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে না আসায় আমরা প্রত্যেক অভিভাবকদের বাড়িতে গিয়েছি। অভিভাবকদের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বদলি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে পাঠাবেন না।’
পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবি জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্কুলের কোনো শিক্ষার্থী না আসায় আমরা প্রত্যেক অভিভাবকদের বাসায় গিয়েছি। এ বিষয়ে আজ অভিভাবক সমাবেশ ডেকেছিলাম। তবে কেউ আসেনি।’
জুতা দিয়ে পেটানোর ঘটনা অসত্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমি ওই এলাকার ১১ জনের নামে থানায় একটি অভিযোগ করেছি। তবে কাউকে জুতাপেটা করিনি।’
হাতীবান্ধা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। সমাধানের জন্য এক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।’
লালমনিরহাট জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসছে না বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’