পঞ্চগড়ে কোনো আলোচনা ছাড়াই শ্রমিকদের পাথর-বালু ট্রাকে উঠানামা (লোড-আনলোড) খরচ বৃদ্ধি করায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার (২৭ আগস্ট) সকাল থেকে জেলার পাথর-বালু ব্যবসায়ী যৌথ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
শুক্রবার রাতে তেঁতুলিয়ার ভজনপুরে পাথর-বালু ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানায়, খনিজ পাথর ও বালু সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। পঞ্চগড়ের ভূগর্ভস্থ ও নদীর পাথর এবং বালু দেশের বিভিন্ন জেলায় অবকাঠামো উন্নয়নে বিক্রি করা হয়। জেলায় ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক এ পাথর বালু লোড আনলোডসহ নিয়মিত কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে এখানে প্রতি ঘনফুট (সিএফটি) দুই টাকা ৮০ পয়সায় পাথর বালু লোড-আনলোড করতেন স্থানীয় শ্রমিকরা। তবে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জেলা ট্রাক ট্রাক্টর, ট্যাংক-লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন ও পঞ্চগড় জেলা মটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নসহ কয়েকটি সংগঠন তাদের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে।
শ্রমিকরা শুক্রবার (২৬ আগস্ট) থেকে প্রতি ঘনফুট পাথর-বালু লোড-আনলোড বাবদ দুই টাকা ৮০ পয়সার বিপরীতে ৪-৫ টাকা পর্যন্ত দাবি করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে পাথর-বালু ব্যবসায়ীরা শনিবার পাথর বালু ক্রয় বিক্রয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। এতে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পরেন।
উপজেলা সদরের জগদল এলাকার শ্রমিক রেজানুর রহমান, আব্দুস ছালাম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সবকিছুর দাম বেড়েছে। আমরা আগে দুই টাকা ৮০ পয়সায় প্রতি সিএফটি পাথর বালু লোড-আনলোড করতাম। এখন এ মজুরি দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। এজন্য আমরা নেতাদের অনুমতি পেয়ে মজুরি বৃদ্ধি করেছি। হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা পাথর-বালু কেনাবেচা বন্ধ করায় সকাল থেকে বসে আছি।
জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আকবর আলী বলেন, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সদস্য হিসেবে জেলায় ১০ হাজারের বেশি পরিবহন শ্রমিক পাথর-বালু লোড-আনলোডের কাজ করেন। তিন বছর আগে প্রতি ঘনফুট লোড আনলোড বাবদ দুই টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারিত হয়। এ তিন বছরে সব কিছুর দাম বেড়েছে। এ মজুরিতে শ্রমিকদের সংসার চলে না। এনিয়ে ব্যবসায়ীসহ প্রশাসনে বারবার বলা হয়। ব্যবসায়ীরা আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই অনির্দিষ্ঠকালের জন্য পাথর-বালু ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করে দেন। এতে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়ি।
পঞ্চগড় জেলা পাথর-বালু ব্যবসায়ী যৌথ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, আগে দুই টাকা ৮০ পয়সায় শ্রমিকরা পাথর-বালু লোড-আনলোড করতেন। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির জন্য আলোচনার মাধ্যমে আমরাও তাদের মজুরি বৃদ্ধি করতাম। কিন্তু কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই তারা ৪-৫ টাকা দাবি করছেন। আগে লোড আনলোড মজুরির বাইরে ট্রাক প্রতি ৩০০ টাকা করে কমিশন নিতেন শ্রমিকরা। রাতারাতি সেই কমিশন এক হাজার টাকা করা হয়েছে। এজন্য বৈঠকের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা পাথর-বালু কেনাবেচা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির একটি আবেদন আমরা পেয়েছি। এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। চলমান সংকট নিয়ে আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। আশা করি আলোচনার মাধ্যমেই দ্রুত এর সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।