উজানের পাহাড়ি ঢলে ও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তা নদীর পানি। ফলে রংপুরে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরে বসবাসরত পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে চরে আবাদ করা আমন ধান, পাটসহ বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সোমবার (১ আগস্ট) রাতে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সকালে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমে আসে। বিকেল ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়, অর্থাৎ বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এরআগে দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭৭ সেন্টিমিটার। ওইসময় বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত নোহালী, কোলকোন্দ, লহ্মীটারী, গজঘণ্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়নের প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে ঘরের আসবাবপত্র, গবাদিপশু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
লক্ষ্মটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার ইউনিয়নের বেশিরভাগ ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিগত সময়ে যেসব গ্রামে পানি ঢোকেনি এবার সেসব গ্রামও প্লাবিত হয়েছে। চরের মানুষের ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পশ্চিম বাগেরহাট আশ্রয়ণ কেন্দ্র এলাকার ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার গঙ্গাচড়ায় বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দীন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিমুর রহমানসহ অন্যরা।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সেইসঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর অববাহিকাভুক্ত লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।