ফরিদপুর পৌরসভার আয়তন ৬৬ দশমিক ৩১ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে ওয়ার্ড সংখ্যা ২৭টি। যার মধ্যে রয়েছে ২৮টি সড়ক। এই সড়কগুলোর মধ্যে ১৬টির অবস্থা বেহাল। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সড়কগুলোর ১২৫ কিলোমিটার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরা এসব সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে পৌর বাসিন্দাদের ভোগান্তির যেন অন্ত নেই। ২৬ বছর আগে পৌরসভাটি ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হলেও সড়কগুলোর নেই কোনো উন্নয়ন হয়নি।
পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছ, ১৮৬৯ সালে গঠিত হয় ফরিদপুর পৌরসভা। তখন ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভার আয়তন ছিল ২২ দশমিক ৩৯ বর্গকিলোমিটার। ১৯৮৩ সালে এই পৌরসভাকে ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে এবং ১৯৮৬ সালে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। বর্তমানে ৬৬ দশমিক ৩১ বর্গকিলোমিটার আয়তনে ২৭টি ওয়ার্ডের এ পৌরসভার মালিকানাধীন ৪৪৫ কিলোমিটারের ২৮টি সড়ক রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ১৬টি সড়কের ১২৫ কিলোমিটারের অবস্থা বেহাল।
এর মধ্যে রয়েছে পৌরসভার অন্যতম প্রধান অম্বিকা চরণ মজুমদার সড়ক। সড়কটির ঝিলটুলী মহল্লা এলাকার জেলা পরিষদ ডাকবাংলো থেকে শুরু হয়ে মহাকালী পাঠশালার মোড় পর্যন্ত বেহাল দশা। ওই এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি চরকলাপুর ও পূর্বখাবাসপুর লঞ্চঘাট জোড়া সেতু হয়ে শহরে প্রবেশের জন্য এটি সংযোগ সড়ক হিসেবেও কাজ করে। অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও সড়কটি সংস্কারের অভাবে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার সুফি আব্দুল বারি সড়কেরও খারাপ অবস্থা। এদিকে পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার কানিজ সড়কের ৩০০ মিটার অংশে, পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি থেকে চুনাঘাট সেতু পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ওপর নির্মিত সড়ক, চুনাঘাট সেতু থেকে আদমপুরগামী সড়ক, দক্ষিণ গোয়ালচামট এলাকার মোল্লাবাড়ি সড়কটির মোতাহার ফকিরের চায়ের দোকানের মোড় থেকে ফরিদপুর বাইপাস পর্যন্ত সড়ক, অম্বিকাপুর রেলক্রসিং থেকে ভাসানচরগামী সড়ক, মহিম স্কুলের সামনে দিয়ে শোভারামপুর স্লুইসগেট সড়কের বেহাল দশার কারণে চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র বাজার ও কোতোয়ালি থানার সামনের গুরুত্বপূর্ণ থানা রোড সড়কের অবস্থাও বেহাল। এ সড়কগুলো দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সংস্কার না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইসমাইল হোসেন, খবির উদ্দিন, ফয়সাল জানান, পৌরসভার বিভিন্ন সড়কের পাশাপাশি মোতাহার হোসেন সড়কে বৃষ্টি হলেই জমে হাঁটুপানি। ইয়াছিন সড়কের শহীদ মিনারের কাছে ও মোল্লাবাড়ির কাছেও জমে থাকে পানি। এছাড়া থানার মোড় থেকে ময়ড়া পট্টিগামী সড়ক, বাদামপট্টি এলাকার সড়ক, চকবাজার থেকে পূর্ব খাবাসপুরগামী মুক্তিযোদ্ধা হরেন্দ্র নাথ সড়ক, টিটিসির মোড় থেকে ব্রাহ্মণকান্দা সড়ক, সিংপাড়া সড়ক, ফরিদপুর মেডিকেল থেকে চর কমলাপুরগামী সড়কগুলোও বেহাল।
ফরিদপুর জজকোর্টের আইনজীবী শেখ সেলিমুজ্জামান রুকু জাগো নিউজকে বলেন, পৌরসভার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। ভেঙেচুরে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেলে এমনকী হেঁটে চলাচল করা খুব কষ্টকর। স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও জেলা শহরে আগতদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য ও সমাজকর্মী সঞ্জীব দাস জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। চলাচল করতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। দ্রুত রাস্তাগুলোর সংস্কার করা দরকার।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অনাথের মোড় পর্যন্ত সড়কের সংস্কারকাজ চলমান। এরই মধ্যে মমিন ম্যানশন থেকে অম্বিকা সড়কসহ সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ পর্যন্ত সড়কের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে এ সড়কের কাজ শুরু হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে বেহাল সড়কগুলো সংস্কার করা হবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোশ জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকটি সড়কের কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি সড়কের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর দামবৃদ্ধির কারণে ঠিকাদারদের কাজের গতি কম। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ চেয়ে অফিসিয়ালভাবে আবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে রাস্তাগুলোর কাজ করা হবে।