উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার (৩ জুলাই) জেলার মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীতে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এর আগে শনিবার বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
এদিকে, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আত্রাই নদীর তিনটি স্থানে পূর্বের ভাঙা বেঁড়িবাঁধ দিয়ে দুইটি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া মান্দা ও আত্রাই সড়কের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। আতঙ্ক রয়েছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- গত পাঁচ বছর থেকে নিয়মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। যেনতেনভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার করায় বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও পুকুর ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা না, স্থায়ী সমাধান পেতে মজবুতভাবে বাঁধ সংস্কার করা হোক এমনটা দাবি এলাকাবাসীর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, রোববার সকাল ৯টা থেকে মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর জোতবাজার পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে শনিবার সকাল ৯টায় মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এছাড়া নওগাঁয় ছোট যমুনা নদী, ধামইরহাট, মহাদেবপুর ও আত্রাই উপজেলার আত্রাই নদী বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
গত কয়েকদিন থেকে নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর পানি যত বাড়ছে মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর দু’পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে যেন ততই আতঙ্ক বাড়ছে। আত্রাই নদীর দক্ষিণ পাড় উপজেলার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পার-নুরুল্লাবাদে দুইটি স্থানে এবং বিষ্ণপুর ইউনিয়নে চকরামপুর গ্রামের একটি স্থানে বেঁড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় দুইটি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে পার-নুরুল্লাবাদ ও চকরামপুর গ্রামের প্রায় শতাধিক বাড়ির বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, পূর্বের বেঁড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় পানি চাপে মান্দা-আত্রাই সড়কের পার-নুরুল্লাবাদসহ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। শনিবার (২ জুলাই) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী। ঘটনাস্থলগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ২০১৭ সাল থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙা শুরু হয়। প্রতিবছর সংস্কার করা হয়। কিন্তু কাজের অনিয়মের কারণে এখন প্রতি বছর ভেঙে শতশত গ্রাম প্লাবিত হয়। ফসল, ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের বন্যায় নষ্ট হয়।
পার-নুরুল্লাবাদ উত্তরপাড়ার বাসিন্দা নবীর উদ্দিন শাহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যতক্ষণ না বেঁড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে ততক্ষণ এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কোনো কাজে আসবে না। ২০১৭ সাল থেকে বেঁড়িবাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর ডুবে যাচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভীষণ কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়। আবারও পানি প্রবেশ করে বাড়ির উঠানে চলে আসছে। ওপর থেকে বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করে গেছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
একই গ্রামের আক্কাস হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামের উত্তর পাড়ার নদীর ধার দিয়ে বেঁড়িবাঁধ আছে। গত কয়েক বছর থেকে ভেঙে যাচ্ছে। যা সংস্কার করা হয়নি। গত কয়েকদিন থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রামে প্রবেশ করে শতাধিক বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধ ভেঙে শতশত গ্রাম প্লাবিত হয়। হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট ও পুকুরের মাছ ভেসে চলে যায়। কবে এসবের সমাধান হবে?
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান খান বলেন, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েকদিনে আত্রাই নদীতে তিন মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে পানির চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল ধরেছে। ঝুঁকিপূর্ণস্থানসহ জরুরিভিত্তিতে ফাটলের স্থানে মেরামতের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেখভাল করে। তবে বেঁড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে পানি চাপে কিছুটা ধস দেখা দিয়েছে।