চীন ও পাকিস্তান সবসময় দম্ভভরে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বললেও সন্ত্রাসী আব্দুল মক্কীকে রক্ষায় জাতিসংঘে চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সেই বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।
জিয়োপলিটিক্যাল ডট ইনফোতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক ভ্যালেরিও ফাবরি লিখেছেন, জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতাসহ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে চীন এক অর্থে পাকিস্তানের জন্য প্রক্সি হিসেবে কাজ করেছে। এই পদক্ষেপটি যে সংকেত দিচ্ছে তা হলো- চীন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের বক্তব্যের বিরোধিতা করতে প্রস্তুত। বস্তুত তারা সন্ত্রাসবাদকে রক্ষা করতে পারে এবং এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে প্রকৃতপক্ষে বাধা দিচ্ছে।
চীন-পাকিস্তান অক্ষের এই ব্যাপারটি মুম্বাই হামলার মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী সাজিদ মীরকে হস্তান্তর কেন্দ্র করে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জুনের শেষে মীরকে গ্রেফতারের আগে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ২০০৮ সালে মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনাকারী লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) সাজিদ মীরের গ্রেফতার করতে তথ্য দিতে ৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
পাকিস্তান বলে আসছিল, ২০১৬ সালে মীর মারা যান। যদিও সম্প্রতি জুনের শেষের দিকে মীরকে গ্রেফতারের খবর জানিয়েছে দেশটি। নিক্কেই এশিয়া জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) এর ‘ধূসর তালিকা’ থেকে বের হতে তাকে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তান।
জিওপলিটিক্যাল জানিয়েছে, লস্কর-ই তৈয়বা (এলইটি) এবং জামাত-উদ-দাওয়ার নেতা আব্দুল রেহমান মক্কীকে সন্ত্রাসী অ্যাখ্যায় চীনের বাধার প্রভাবে সাজিদ মীরের ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে দুই রকমের অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তান।
আব্দুল রেহমান মক্কী এলইটির ডেপুটি কমান্ডার এবং সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সায়্যিদের শ্বশুর। জাতিসংঘের স্যাংশন কমিটি এলইটির রাজনৈতিক শাখা জামাত-উদ-দাওয়াকেও একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।
সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়নের অভিযোগে হাফিজ সায়্যিদকে গত ৮ এপ্রিল লাহোরের সন্ত্রাসবিরোধী একটি আদালতের রায়ে ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এলইটি ও জামাত-উদ-দাওয়ার হাফিজ সায়্যিদ, জঈশ-ই মুহম্মদ ও এর প্রধান মাসুদ আজহার সন্ত্রাসবিরোধী রেজল্যুশন-১২৬৭ এর অধীনে তালিকাভুক্ত।
মুম্বাই হামলার প্রতি পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে পাল্টেছে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপ আটকানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
২০২০ সালের ‘ইউএস কান্ট্রি রিপোর্ট অন টেররিজম’ অনুসারে, ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ড জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহার এবং এলইটি এর সাজিদ মীরসহ সন্ত্রাসীদের বিচার করতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান।