দশ, বিশ কিম্বা ত্রিশ নয়। একই বাড়িতে জীবনের ১০৪টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এক নারী। তার দুই ভিন্ন বয়সে বাড়ির দরজায় তোলা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে।
এখনকার দিনে বেশিরভাগ মানুষই প্রতিনিয়ত নতুনত্ব চান। পুরনো বাড়ি ভেঙে বানান নতুন বাড়ি। ছোট বাড়ি থেকে বড় বাড়ি। একটা বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আবেগ স্মৃতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়।
তবে কয়েক প্রজন্ম আগে বিষয়টা অন্যরকম ছিল। আর তারই প্রমাণ যুক্তরাজ্যের এলসি অলকক। বর্তমানে তার বয়স ১০৪ বছর। নতুন কোনো গাড়ি কিম্বা বাড়ি কোনো কিছুই প্রলুব্ধ করতে পারেনি শতবর্ষী এ নারীকে। যে বাড়িতে তার জন্ম হয়েছে। শৈশব-কৈশর আর যৌবনের সেই বাড়িতেই আজও বাস করছেন এলসি।
১৯১৮ সালে নটিংহ্যাশায়ারের হুথওয়েটের বার্কার স্ট্রিটে অবস্থিত দুই কক্ষের একটি বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এলসি। জর্জ পঞ্চম তখন ব্রিটেনের রাজা। আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে তখনও কয়েক মাস বাকি। এরপর দিন মাস বছর করে সময়ের অদৃশ্য চক্র চড়ে জীবনের শেষ বেলায় উপনীতি হয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ সমাজ কিভাবে আজকের এই রুপ নিল তা প্রত্যক্ষ করেছেন।
১০৪ বছরের জীবনে দু দুটি বিশ্বযুদ্ধ, চার ব্রিটিশ রাজা ও রানী ও ২৫ জন প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় আসতে ও যেতে দেখেছেন এলসি। চলতি মাসের শুরুর দিকে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সানকে এক সাক্ষাৎকার দেন তিনি। তাতে তিনি ভাগাভাগি করেছেন সারাজীবন একটি বাড়িতে কাটিয়ে দেয়ার অভিজ্ঞতা।
এলসি জানান, তার বাবা ১৯০২ সালে ৭ শিলিং ৬ পেন্স দিয়ে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট এলসি। তার বয়স যখন ১৪ তখন তার মা মারা যায়। তিনি বলেন, ‘আমার মা এলিজা মারা গেলেন। তাই বাবার দেখাশুনা করার জন্য এখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
১৯৪১ সালে এলসির বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে নয়, স্বামীকে নিয়ে বার্কার স্ট্রিটের ওই বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন তিনি। সেই স্মৃতি মন্থন করে এলসি বলেন, ‘যখন বিলের সঙ্গে (তার স্বামীর নাম বিল) আমার বিয়ে হলো, আমরা ওই বাড়িতেই উঠলাম। আর কখনই নামিনি।’
১৯৪৯ সালে এলসির বাবাও মারা যান। এরপর এলসির স্বামী সেই বাড়িটা কিনে নেন। এলসির কথায়, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর ১৯৬০ সালের দিকে আমরা বাড়িটি কিনে নিই ।’ বর্তমানে বাড়িটির দাম প্রায় ৭৫ হাজার পাউন্ড। কিন্তু সেই সময় এটা মাত্র ২৫০ পাউন্ডে কিনেছিলেন এলসি ও তার স্বামী।
সাক্ষাৎকারে এলসি জানান, ওই বাড়ি ছাড়া আরও কোথাও যেতে চাননি তিনি। দুই কক্ষের ওই বাড়িটিই তার কাছে ‘সবকিছু’। এলসির একমাত্র ছেলে রে অলককের বয়স ৭৫ বছর। স্ত্রী প্যাট অলকক ও ছেলে মেয়ে নিয়ে মায়ের সঙ্গে ওই বাড়িতেই বাস করেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, কত শত স্মৃতি জড়ানো বাড়িটিকে খুব ভালবাসেন তার মা।